ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির এই ৫টি দর্শনীয় স্থানে ঘুরে আসুন

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য ঠিকানা। ঈদের ছুটিতে যদি আপনার অবসর সময়গুলো প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানোর পরিকল্পনা থাকে, তবে খাগড়াছড়ি হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ একটি গন্তব্য। এই জেলার অপূর্ব পাহাড়, ঝরনা, নদী, আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো আপনার ঈদের ছুটিকে স্মরণীয় করে তুলবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, খাগড়াছড়ির সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

খাগড়াছড়িতে কিভাবে যাবেন?

খাগড়াছড়ি যেতে হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্য জেলা থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে শ্যামলী, এস.আলম, শান্তি পরিবহন, সৌদিয়া ইত্যাদি পরিবহনের মাধ্যমে সরাসরি খাগড়াছড়ি শহরে আসা যায়। সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা। যারা চট্টগ্রাম থেকে যেতে চান, তারা ফটিকছড়ি, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা হয়ে সহজেই পৌঁছাতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরে।

খাগড়াছড়িতে ভ্রমণের জনপ্রিয় স্থানসমূহ

১. আলুটিলা গুহা

খাগড়াছড়ির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো আলুটিলা গুহা। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই গুহাটি প্রায় ৩৫০ ফুট লম্বা এবং গুহার ভিতরে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন হয় একটি টর্চ বা মশাল। গুহার ভিতরে ঠান্ডা বাতাস এবং রহস্যময় পরিবেশ আপনার অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি এখানে পাবেন পাহাড়কে কাছ থেকে উপভোগ করার সুযোগ, ঝুলন্ত ব্রিজসহ পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবসহ সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ। এখানে প্রবেশের জন্য একটি নিদির্ষ্ট পরিমাণ প্রবেশ ফি ধার্য করা হয়।  

২. রিছাং ঝরনা

শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রিছাং ঝরনা ঈদের ছুটিতে আপনার জন্য হতে পারে একটি মনোমুগ্ধকর স্থান। এই ঝরনার জলপ্রপাত ও চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আপনাকে প্রশান্তি এনে দেবে। বর্ষার পর ঝরনাটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। এখানে যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি শহর থেকে  স্থানীয় মোটরবাইক বা সিএনজি ভাড়া করে যাওয়া যেতে পারবেন।  

৩. সাজেক ভ্যালি

যদিও এটি রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত, তবুও খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথ অনেকটাই সহজ এবং জনপ্রিয়। সাজেক ভ্যালির পাহাড়ি সৌন্দর্য, মেঘের খেলা, আদিবাসী সংস্কৃতি ও শান্ত পরিবেশ ঈদের ছুটিকে আরও রঙিন করে তুলবে। সাজেকে যেতে হলে খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা জীপ নিয়ে রওনা হতে হবে। খাগড়াছড়ির জেলার দীঘিনালা উপজেলা হয়ে সাজেক যেতে হয়। 

৪. মায়াবিনী লেক

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত এই লেকটি তার স্বচ্ছ জলরাশি ও চারপাশের সবুজ পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত। লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক এখানে আসেন। নৌকা ভ্রমণের সুযোগও রয়েছে সেখানে। এটি পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। 

৫. শান্তিপুর অরণ্য কুটির

পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর নামক স্থানে প্রায় ৬৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই বৌদ্ধ তীর্থস্থানটি গভীর অরণ্যে আবৃত। এখানে একটি ৫০ ফুট উচ্চতার বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা নির্মাণ করতে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। এটি খাগড়াছড়ির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান। অসংখ্য পযর্টক প্রতিনিয়ত সেই স্থানটি দেখতে ভিড় জমায় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে। 

স্থানীয় খাবার ও সংস্কৃতি

খাগড়াছড়িতে গিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি খাবার খাওয়ার সুযোগ হারাবেন না। এখানে আপনি আদিবাসী রান্না করা বাঁশের চিকেন, পাহাড়ি শুঁটকি, কলাপাতায় মোড়ানো মাছ, পাহাড়ি মধু ইত্যাদি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।

ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টিপস:

১. যাতায়াত ব্যবস্থা: খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস পাবেন। স্থানীয় পর্যায়ে ঘোরার জন্য জীপ, চান্দের গাড়ি বা মোটরবাইক নিতে পারেন। 

২. থাকার ব্যবস্থা: সাজেক ঘুরতে চাইলে আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। 

3. নিরাপত্তা: পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের সময় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। 

৪. পরিবেশ সংরক্ষণ: প্রকৃতির সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে ময়লা আবর্জনা থেকে শুরু করে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল থাকুন।

খাগড়াছড়ির অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়ি ঝরনা, মেঘ ছোঁয়া ভ্যালি ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঈদের ছুটির আনন্দ দ্বিগুণ করে তুলতে পারে। তাই, যদি শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, তবে খাগড়াছড়ি হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য। ঈদের ছুটিতে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এবং উপভোগ করুন এই অপরূপ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।