লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

লাইলাতুল কদর কি? 

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রমজানের শেষ দশকের যে রাতগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাইলাতুল কদর। মাগরিবের পর থেকেই শুরু হয় এ রাতের মহিমা, যা ফজরের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এটি এমন একটি রাত যখন আল্লাহর অসীম রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়, ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং বান্দাদের জন্য গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। মুসলিম উম্মাহদের জন্য এই রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছরের বেশি সময়ের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। 

লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৪০০ বছর আগের এক বিশেষ মুহূর্তে। এই রাতেই মহান আল্লাহর তরফ থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান আল-কুরআন নাজিলের সূচনা হয়। তিনি বলেন—

"নিশ্চয়ই আমি আল-কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। এবং তোমরা কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি বিষয়ে অবতীর্ণ হন। এই রাত শান্তিময়, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।" (সূরা কদর: ১-৫)

এই রাতেই নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি প্রথম ওহী নাজিল করা হয়। জিব্রাইল (আ.) হেরা গুহায় এসে বলেছিলেন "পড়ো, তোমার মহান আল্লাহর নামে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন!" (সূরা আলাক: ১)। 

হাদিস অনুযায়ী, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর অর্থ্যাৎ (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ মুসলিম ২৭তম রমজানকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি যে কোনো বেজোড় রাতে হতে পারে। এছাড়াও অনেক হাদিসে বলা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তাদের তাকদির পুনর্নির্ধারণ করেন।

কদরের রাতে করণীয় আমলসমূহ

• নফল নামাজ আদায় করা: বেশি করে নফল নামাজ পড়া।​
• কুরআন তিলাওয়াত করা: কুরআন নাজিলের রাতে কুরআন তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে।​
• দোয়া ও ইস্তেগফার: আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা এবং ইস্তেগফার করা।​
• তওবা করা: এ রাতকে কাজে লাগিয়ে অতীতের সকল গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত।
• সৎকাজ ও দান-সদকা করা: গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা এবং সৎকাজে অংশগ্রহণ করা।ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।

লাইলাতুল কদরের শিক্ষা ও তাৎপর্য

• আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য: এ রাত আমাদের জীবনে তওবা করার এবং নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ দেয়।

• গুনাহ থেকে মুক্তি: অতীতের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

• সমাজের কল্যাণে কাজ করা: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে সাহায্য করা এবং ভালো কাজে অংশগ্রহণ করা।

সর্বশেষে,

লাইলাতুল কদর আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা আমাদের গুনাহ মাফের ও জান্নাত লাভের সুযোগ এনে দেয়। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের মহিমা উপলব্ধি করার এবং এই পবিত্র রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাঁর রহমত ও ক্ষমা লাভের সুযোগ গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। আমিন।