মহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প

রাসুল (সা.)-এর দয়া ও মানবিকতার অনন্য উদাহরণ ইহুদি ছেলেটির গল্প। কীভাবে মহানবীর চরিত্রের ছোঁয়ায় এক ইহুদি ছেলে ইসলাম গ্রহণ করলো, জানুন এই অনুপ্রেরণামূলক কাহিনিতে।

Mar 24, 2025 - 11:13
 0  37
মহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প
মহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প

ইসলামের ইতিহাসের পাতায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তিনি ছিলেন দয়ার সাগর, যার নৈতিকতা ছিল অতুলনীয়। যার চারিত্রিক গুণাবলী শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়। তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, দয়ালু ও উদারচিত্তের অধিকারী। রাসুল (সা.)-এর দয়া, ক্ষমাশীলতা এবং মানবিক আচরণের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত হলো ইহুদি ছেলের গল্প।

মদিনায় নবীজির (সা.) আগমনের পর সেখানে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ বাসরত ছিল। কিন্তু সেসময় ইহুদিদের সংখ্যায় বেশি ছিল। তবে তারা মহানবী (সা.)-কে ভালো করে চিনত এবং জানত যে, তিনি কতটা সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ। তাদের মধ্যেই ছিল সেই ছেলেটি, তার নাম আবদুল কুদ্দুস।

আবদুল কুদ্দুসের জন্ম হয়েছিল এক দরিদ্র ইহুদি পরিবারে। যে জীবিকার প্রয়োজনে মদিনার বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো কাজ করত। একসময় সে রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন কাজে সহায়তা করার দায়িত্ব পায়। সে  রাসুল (সা.)-এর ছোটখাটো কাজ গুলো করে দিতো যেমন: জিনিসপত্র আনা, সেবা করা ইত্যাদি। ছেলেটি নবীজির পাশে থেকে সে দেখতে পায় এক অনন্য মহৎ চরিত্রের মানুষ, যিনি কিনা কখনো কাউকে কষ্ট দেন না, সবসময় ন্যায়বিচার করেন এবং দাস-দাসীদের প্রতিও সুন্দর আচরন ও অসীম দয়াশীল।

আবদুল কুদ্দুস নবীজি (সা.)-এর সাথে থেকে তার দয়ার স্পর্শ অনুভব করতে থাকে। সে দেখে মহানবী (সা.) কখনো তাকে কঠোর ভাষায় কথা বলেন না, বকা ঝকা করতেন না, কোনো ভুল হলে ধমক দিতেন না বরং, সবসময় নরম ভাষায় বোঝাতেন। ছেলেটি প্রতিনিয়ত তার বাবাকে নবীজিকে নিয়ে সকল কথা বলতেন। তার বাবা আবদুল কুদ্দুস এর কথা শুনে খুবই খুশি হতো।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, “আমি দশ বছর নবীজি (সা.)- এর খেদমতে ছিলাম, কখনো তিনি আমাকে উঁহ্ পর্যন্ত বলেননি, আমার কোনো ভুল হলে কখনো জিজ্ঞেস করেননি কেন এটি করেছ কিংবা কেন করোনি?” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩০৯)

আবদুল কুদ্দুস নবীজি (সা.)-এর চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে যায়। সে দেখতে পায়, নবীজি (সা.)-এর আচরণ অন্য সবার চেয়ে ভিন্ন। তিনি দাসদেরও তার পরিবারের সদস্যের মতো মনে করতেন। তিনি যা খেতেন দাস-দাসিদেরও তাই খাওয়াতেন। 

একদিন রাসুল (সা.) দেখলেন, আবদুল কুদ্দুস কাজে  আসছে না। তিনি খুবই দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন।  তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, সে খুব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং শয্যাশায়ী। এই খবরে রাসুল (সা.) বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজে গিয়ে ছেলেটিকে দেখে আসবেন। সাহাবীদের সাথে মিলে দ্রুত ছেলেটির বাসায় চলে গেলন। রাসুল (সা.) ছেলেটির বাড়িতে পৌঁছালেন এবং তার শিয়রে বসে পড়লেন। তিনি তার মাথার পাশে হাত রাখলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। এ দৃশ্য দেখে ছেলেটির বাবা হতবাক হয়ে গেলেন। এত বড় একজন নেতা, যার কাছে হাজারো মানুষের কাজ, তিনি কি না একজন সাধারণ ইহুদি ছেলের জন্য এসেছেন।

নবীজি (সা.) ছেলেটিকে স্নেহভরে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো, তাহলে জান্নাত পাবে। ছেলেটি কাঁপতে কাঁপতে বাবার দিকে তাকাল। তার চোখে দ্বিধা, সে জানে তার পরিবার ইহুদি ধর্মের অনুসারী। বাবার অনুমতি ছাড়া সে কিছু করতে পারে না। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা ঘটল। তার বাবা আবেগভরে বললেন,রাসুল (সা.) কথা শুনো। এ কথা শোনার পর আবদুল কুদ্দুস নবীজির সাথে সাথে কালিমা পাঠ করল: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।” কিন্তু কালিমা উচ্চারণ করার কিছুক্ষণ পরই ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। রাসুল (সা.) একটুখানি হাসলেন এবং বললেন, “সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাকে আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। রাসুল (সা.) সাহাবিদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য জানাজার নামাজ পড়ো।” এরপর সাহাবিরা জানাজার নামাজ পড়লেন এবং তাকে ইসলামি রীতি অনুযায়ী দাফন করা হলো।

গল্পের শিক্ষা

এই গল্প আমাদের অনেক কিছু শেখায়:

১. মানবিকতা ও উদারতা: নবীজি (সা.) কারো ধর্ম, জাতি বা সামাজিক অবস্থান দেখে নয়, বরং সকল মানুষের প্রতিই দয়া দেখিয়েছেন।

২. সদাচরণ ও ভালোবাসা: রাসুল (সা.)-এর ভালো ব্যবহারের কারণেই ইহুদি ছেলেটির অন্তরে পরিবর্তন আসে।

৩. সততার প্রভাব: ইসলামের সৌন্দর্য ও নবীজি (সা.)-এর চরিত্র দেখে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

৪. মৃত্যুর সময় সত্য গ্রহণ: ইসলাম সবসময় মানুষের মুক্তির বার্তা দেয় এবং মৃত্যুর আগেও সত্য গ্রহণ করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।

 

 

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow