যে ৪টি কৌশলে হ্যাক হতে পারে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট
জানুন কীভাবে হ্যাকারা ওটিপি চুরি, সিম সোয়াপ, হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব হাইজ্যাক এবং মার্জ কলের মাধ্যমে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারে এবং কীভাবে নিজেকে তা থেকে সুরক্ষিত রাখবেন।

হোয়াটসঅ্যাপ একটি জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, যার শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা থাকার পরও হ্যাকাররা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে। শুধু অ্যাকাউন্ট হ্যাক করাই নয়, বরং সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচিতজনদের কাছে প্রতারণামূলক বার্তা পাঠিয়ে আর্থিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি সাধন করছে। বর্তমান সময়ে যে চারটি প্রধান কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হচ্ছে, তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
১. ওটিপি চুরি: আপনার ছয় সংখ্যার কোডই বিপদের কারণ
ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) ফিশিং বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি হ্যাকিং কৌশল। হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ছয় সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। সাধারণত তারা হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট সেন্টার বা পরিচিত কারও পরিচয়ে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা করে।
কীভাবে প্রতারণা করা হয়?
- হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট বা পরিচিত ব্যক্তি সেজে বার্তা পাঠায়
- পুরস্কার, অফার বা জরুরি বার্তার নাম করে ওটিপি চায়
- ব্যবহারকারী যদি ওটিপি প্রদান করে, তবে হ্যাকার সহজেই তার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে।
কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
- কখনোই ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
- হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা এলে যাচাই করুন।
- টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু রাখুন।
২. সিম সোয়াপ: আপনার নম্বরই হ্যাকারদের হাতে
সিম সোয়াপ হ্যাকিং হল এমন একটি কৌশল, যেখানে হ্যাকাররা কোনো ব্যক্তির সিম কার্ড ক্লোন করে নেয় বা তার নম্বর নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসে। ফলে হ্যাকার সেই সিম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
কীভাবে এটি ঘটে?
- হ্যাকার মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করে সিম রিপ্লেসমেন্টের অনুরোধ জানায়।
- কোনোভাবে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্য দিয়ে সিম পরিবর্তনের অনুমতি নেয়।
- নতুন সিম পেয়ে ওটিপি সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপে লগইন করে।
কীভাবে রক্ষা পাবেন?
- মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে সংযোগ করে সিম পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রাখুন
- গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের জন্য ইমেইল অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন
- যে কোনো অস্বাভাবিক নোটিফিকেশন এলে সতর্ক থাকুন
৩. হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব হাইজ্যাক: আপনার ফোন কিছুক্ষণের জন্য গেলেই সর্বনাশ
হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব এমন একটি সুবিধা, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের সংযোগ ছাড়াই কম্পিউটার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু হ্যাকাররা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে।
কীভাবে হ্যাক করা হয়?
- হ্যাকাররা কোনোভাবে ব্যবহারকারীর ফোন কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিয়ে নেয়
- ফোনের মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজারে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব সংযোগ করে।
- একবার সংযোগ হয়ে গেলে, তারা দূর থেকেও সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
- কারও হাতে আপনার ফোন তুলে দেবেন না।
- হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংসে গিয়ে ওয়েব লগইন চেক করুন এবং সন্দেহজনক লগইন থাকলে লগ আউট করুন।
- দুই ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রাখুন।
৪. মার্জ কল: প্রতারণার নতুন ফাঁদ
মার্জ কল প্রতারণার একটি নতুন কৌশল, যেখানে হ্যাকাররা পরিচিত ব্যক্তির পরিচয়ে ফোনকল করে এবং কল চালু থাকার অবস্থায় অন্য ব্যক্তিকে যুক্ত করার অনুরোধ করে।
কীভাবে প্রতারণা করা হয়?
- প্রথমে হ্যাকার ভুয়া পরিচয়ে কল করে।
- ফোনকলে জরুরি কারণ দেখিয়ে আরেকজনকে মার্জ (যুক্ত) করতে বলে।
- ফোনকলে যুক্ত করলেই সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওটিপি যাচাইকরণ কল হয়ে যায়।
- হ্যাকার সহজেই ওটিপি পেয়ে যায় এবং হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
- অপরিচিত বা সন্দেহজনক কল এলে মার্জ করার অনুমতি দেবেন না।
- যদি কোনো জরুরি কল আসে, তবে যাচাই না করে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।
- দুই ধাপের অথেনটিকেশন চালু রাখুন।
হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উপরের চারটি কৌশল সম্পর্কে জানা থাকলে এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিলে আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। তাই, ওটিপি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন। সাইবার নিরাপত্তা বজায় রেখে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
What's Your Reaction?






