হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার নিষিদ্ধ

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন লঙ্খন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।

Mar 13, 2025 - 04:14
Mar 13, 2025 - 04:25
 0  61
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার নিষিদ্ধ
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার নিষিদ্ধ

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, এমবিবিএস (MBBS) ও বিডিএস (BDS) ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের বাইরে অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। বুধবার (১২ মার্চ) দুটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বিচারপতি রাজিক আল জলিলের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, ১২ মার্চ পর্যন্ত যারা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে, আগামীকাল (১৩ মার্চ) থেকে যদি কেউ এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি ব্যতীত ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনের চ্যালেঞ্জ ও হাইকোর্টের রায়

এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না—এই সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন দায়ের করেন ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি (ডিএমটি) ও ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) ডিগ্রিধারী কয়েকজন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। তারা ২০১০ সালের ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট’ (বিএমডিসি আইন)-এর ২৯ নম্বর ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল রিটের প্রথম শুনানি হয়। এরপর এটি দীর্ঘ ৬৭ বার আদালতের কার্যতালিকায় আসে, তবে ব্যাখ্যা না দিয়েই বারবার শুনানি স্থগিত করা হয়। অবশেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারের বিষয়ে দায়েরকৃত রিট মামলা ২৭৩০/২০১৩ এবং বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০-এর ধারা ২৯ সংক্রান্ত মামলার ৯১তম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ (১২ মার্চ) চূড়ান্তভাবে রায় ঘোষণা করেন।

চিকিৎসকদের আন্দোলন ও প্রতিক্রিয়া

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই দেশের চিকিৎসক সমাজ ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির প্রেক্ষিতে এই রায় ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহা সমাবেশের ডাক দেন।

সমাবেশে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা আনয়ন, এবং অপচিকিৎসা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে সমবেত হন এবং সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা দাবি করেন, ‘ডাক্তার’ শব্দের ব্যবহার শুধুমাত্র এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত হওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য সেবার ওপর প্রভাব

চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে সারাদেশের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ (আউটডোর) ও বহিরাগত রোগীদের সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। হাসপাতালগুলোর সাধারণ চেম্বার এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। তবে রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবাগুলো চালু রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইনটি কার্যকর হলে এটি চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং জনসাধারণকে অপচিকিৎসা থেকে রক্ষা করবে। অনেক চিকিৎসকই মনে করছেন, এটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং জনগণ আরও ভালো ও যোগ্য চিকিৎসাসেবা পাবে।

আইনের প্রভাব ও ভবিষ্যতের চিত্র

এই আইনের ফলে বাংলাদেশে চিকিৎসা পেশার সুনাম ও মান আরও সংহত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জনসাধারণের জন্য গুণগত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই রায় কার্যকর হলে চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা ও স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছে। তবে, স্বাস্থ্য খাতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশাদারদের প্রতিক্রিয়া কী, তা সময়ই বলে দেবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow