এক নজরে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালির নাম মনে আসলেই যে কারও চোখের সামনে ভাসে মেঘময় এক পৃথিবী। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কখনও তীব্র শীত, মুহূর্তেই হয়তোবা শীত অথবা বর্ষা।

Oct 29, 2024 - 17:50
Dec 1, 2024 - 17:16
 0  30
এক নজরে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি
এক নজরে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালির নাম মনে আসলেই যে কারও চোখের সামনে ভাসে মেঘময় এক পৃথিবী। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কখনও তীব্র শীত, মুহূর্তেই হয়তোবা শীত অথবা বর্ষা। চোখের পলকেই হয়তো বা আপনার চারপাশ ঢেকে যাবে সাদাকালো মেঘে। এ যেন মেঘের উপত্যকা। নিজেকে মনে হবে মেঘের রাজ্যের বাসিন্দা। হয়তো মনের অজান্তেই খুঁজতে থাকবেন সাদা মেঘের পরী অথবা মেঘের মধ্যে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজ পুত্রকে। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে উঠতে দেখতে পাবেন মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালী। কংলাকের চূড়ার উঠে চারপাশে তাকালে  ভুলে যাবেন যে আপনি ছিলেন কোন যান্ত্রিক নগরে দূষিত বাতাস, দূষিত শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেয়া মানুষ।

আপনার মন-প্রাণ-দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে। প্রভাত এবং প্রাতঃবেলায় সূর্যের উদয়-অস্ত দেখার সুখানুভূতি আপনি সারা জীবন মনে রাখবেন। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অকবিও হয়ে ওঠেন কবি, অপ্রেমিকও হয়ে ওঠে প্রেমিক, একজন সচেতনও অবচেতনে হয়ে ওঠেন উন্মাতাল। একজন বৃদ্ধও সবুজের সুরা পান করে হয়ে ওঠেন তেজদীপ্ত তরুণ।

কিভাবে আসবেন সাজেক ভ্যালি

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছ থেকে জীপগাড়ি (চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া নিবে ১১,৫০০-১২,৫০০ টাকা। এক গাড়িতে করে ১০-১৩ জন যেতে পারবেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪০০০-৫০০০ টাকা 

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে মাহিন্দ্রা গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। এক গাড়িতে করে ৮-১০ জন যেতে পারবেন। তবে লোক কম থাকলে অন্য কোনো ছোট গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতি নির্ধারণ করেছে মাহিন্দ্রা ও চান্দের গাড়ি ভাড়া।

সেনাবাহিনী, টুরিস্ট পুলিশ প্রশাসন পর্যটন কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় দিন দিন বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা। আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, শীতকালে দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হবে সকাল  ১০.৩০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে। তাই ওই সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। সকালের এসকোর্ট মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। এসকোর্ট ছাড়া যাবার অনুমতি পাবেন না।

সাজেক ভ্যালির কংলাক পাহাড়ের পরিচিতি

সাজেক ভ্যালি মূলত রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। কংলাক পাহাড় থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। চারদিকে পাহাড়, সবুজ আর মেঘের অকৃত্রিম সৌন্দর্য চোখে পড়ে। রুইলুই পাড়া হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত; সাজেকের হ্যালিপ্যাড হতে ৩০-৪০ মিনিট ট্রেকিং করে কংলাক পাড়ায় যেতে হয়। নিজ চোখে না দেখলে এই পাহাড়ের বর্ণনা করে বুঝানো যাবে না

সাজেকের হেলিপ্যাড


সাজেকের হেলিপ্যাড সেখান থেকে পুরো সাজেক দেখা যায়। হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যি মনকে আকৃষ্ট করেছিল। সেখানে দল বেঁধে সেলফি তুলছিলেন ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। আপনারাও ছবি তোলা ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে পারেন বিকেলের সময়টা।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়


সারা বছরই সাজেক ভ্রমণ করা যায় শুধু মাত্র বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ না করাই উত্তম। রাস্তায় ধ্বস নামতে পারে, রাস্তায় ভেজা থাকায় এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা থেকে যায় পাহাড় ধ্বস হতে পারে। তাই বর্ষা কালের পরে শীত কালের শুরুর দিক পর্যন্ত সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের আদর্শ সময়। এই সময় আকাশে মেঘও পাওয়া যায় প্রচুর। গরমটা এড়িয়ে প্ল্যান করাটাই উত্তম।

পরিশেষে পাহাড়ি এলাকা গুলো ভ্রমণের মধ্যে সাজেক অন্যতম একটা জায়গা। যেখান থেকে মেঘ ছোয়া যায়। তবে মেঘ সব সময় ছুঁতে না পারলেও প্রকৃতির রং রূপে সাজেক অন্যতম আকর্ষণ তৈরি করে প্রতিটা ঋতুতেই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow