শীতকালে দাঁত শিরশির করার কারণ এবং সমাধান
শীতকালে দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে এখানে পড়ুন। ঠান্ডার জন্য দাঁতের সংবেদনশীলতার কারণ এবং এর সমাধানের সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
শীতকাল আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং দাঁত তার ব্যতিক্রম নয়। ঠান্ডা তাপমাত্রা অনেক সময় দাঁতে শিরশির করা অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। এই সমস্যাটি কেন হয় এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায়, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শীতকালে দাঁত শিরশির করার কারণ
দাঁত শিরশির করার সমস্যাটি মূলত দাঁতের সংবেদনশীলতার কারণে ঘটে। শীতে এটি আরও বেড়ে যায়, যার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে:
১. দাঁতের এনামেলের ক্ষয়: দাঁতের বাইরের শক্ত স্তর, এনামেল, যখন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন দাঁতের ভেতরের সংবেদনশীল অংশ ‘ডেন্টিন’ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ঠান্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে এই ডেন্টিনে থাকা নার্ভগুলো দ্রুত সাড়া দেয় এবং শিরশির অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
২. মাড়ির সঙ্কোচন: শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মাড়ি সঙ্কুচিত হতে পারে, ফলে দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। দাঁতের শিকড় নার্ভের সংস্পর্শে থাকে বলে এটি শিরশির করার অন্যতম কারণ।
৩. সাইনাসের সমস্যা: শীতে সাইনাসের প্রদাহ বা সংক্রমণ বেশি দেখা দেয়। সাইনাসের চাপের কারণে উপরের চোয়ালের দাঁত শিরশির করতে পারে।
৪. ঠান্ডা বা গরম খাবারের প্রভাব: শীতে গরম চা, কফি বা স্যুপ এবং ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শ দাঁতের সংবেদনশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
৫. ব্রাশ করার ভুল পদ্ধতি: খুব জোরে বা ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করলে এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে দাঁত শীতে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
৬. দাঁতের ফাটল বা ক্ষতি: দাঁতে ফাটল থাকলে ঠান্ডা বাতাস বা খাবার সরাসরি নার্ভে পৌঁছে দাঁত শিরশির করার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
শীতকালে দাঁত শিরশির করার প্রতিরোধ ও সমাধান
এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব সঠিক যত্ন ও অভ্যাসের মাধ্যমে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে শীতকালে দাঁতের শিরশির করা এড়ানো যাবে:
১. সংবেদনশীল দাঁতের জন্য বিশেষ পেস্ট ব্যবহার করুন: সংবেদনশীল দাঁতের জন্য তৈরি বিশেষ পেস্ট ব্যবহারে ডেন্টিনে থাকা ক্ষুদ্র নালিগুলো বন্ধ হয় এবং শিরশির করার সমস্যা কমে যায়।
২. নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন: নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে হালকাভাবে দাঁত ব্রাশ করুন। এটি দাঁতের এনামেল রক্ষা করে এবং সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে।
৩. ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে হালকা গরম পানীয় গ্রহণ করুন।
৪. মুখ পরিষ্কার রাখুন: নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা এবং অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ ব্যবহার মাড়ি ও দাঁতের সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে।
৫. ফ্লোরাইড ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করুন: ফ্লোরাইড দাঁতের এনামেলকে মজবুত করে তোলে এবং সংবেদনশীলতা কমায়। একজন দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬. মাড়ির যত্ন নিন: মাড়ি ম্যাসাজ করা এবং পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণের মাধ্যমে মাড়িকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখা সম্ভব।
৭. দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একজন দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তিনি দাঁতের অবস্থা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা প্রদান করবেন।
শীতে দাঁতের সাধারণ যত্ন
শীতে দাঁত এবং মুখগহ্বরের সুস্থতা বজায় রাখতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
-
দিনে দুবার ব্রাশ করুন: সকালে এবং রাতে দাঁত ব্রাশ করা আবশ্যক।
-
মুখ ধুয়ে ফেলুন: খাবারের পর মুখ ধোয়া অভ্যাস করুন।
-
চিনি কম খান: অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়। তাই শীতকালে চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: মুখ শুষ্ক হওয়া এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
শীতকালে দাঁত শিরশির করার সমস্যাটি অস্বস্তিকর হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। দাঁতের সঠিক যত্ন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শীতে দাঁতের শিরশির করার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই শীতের শুরুতেই দাঁতের যত্নে মনোযোগ দিন এবং সুস্থ থাকুন।
What's Your Reaction?