প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের যত সুবিধা ও অসুবিধা

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের আগে এর সুবিধা ও অসুবিধা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে এর ব্যবহার আপনাকে অনেক....

Oct 29, 2024 - 09:55
Nov 15, 2024 - 11:27
 0  8
প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের যত সুবিধা ও অসুবিধা
প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের যত সুবিধা ও অসুবিধা

প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটার বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি অনেক দেশেই একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি। এটি একটি আধুনিক মিটারিং সিস্টেম যা গ্রাহকদের ব্যবহারের পূর্বেই বিদ্যুতের জন্য অর্থ প্রদান করার প্রয়োজন হয়। প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন। পোস্ট-পেইড মিটারের পরিবর্তে এই পদ্ধতি অনেকের কাছে সুবিধাজনক হলেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে প্রি-পেইড মিটারের যত ধরণের সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: 


প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের সুবিধা
প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করে, যা গ্রাহক ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি উভয়ের জন্যই উপকারী। এর কিছু প্রধান সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। এই মিটার গ্রাহকদের অগ্রিম পরিশোধের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ফলে, গ্রাহকরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এবং বাজেট অনুযায়ী ব্যয় সীমিত রাখতে পারেন। এটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি, কারণ তারা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ বিলের ঝামেলা এড়াতে পারেন।

২. কোনো বকেয়া বিল থাকে না

পোস্ট-পেইড মিটারে গ্রাহকদের মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে হয়। অনেক সময় বিল পরিশোধে দেরি হলে জরিমানা বা বিলম্ব ফি দিতে হয়। তবে প্রি-পেইড মিটারে বকেয়া বিলের কোনো ঝামেলা থাকে না। প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন এবং টাকা শেষ হলে পুনরায় রিচার্জ করেন। তাই বকেয়া বিল বা জরিমানা ফি নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন হয় না।

৩. বিদ্যুৎ অপচয় রোধ

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে অনেক বেশি সতর্কতা আসে। কারণ গ্রাহকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাই তারা অপচয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। ফলে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় এবং সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের উপর চাপ কমে আসে।

৪. গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি

এই মিটার ব্যবহারকারীদের নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। মাস শেষে উচ্চ বিদ্যুৎ বিলের আশঙ্কা না থাকায় গ্রাহকরা প্রতিদিনের খরচ সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। এতে করে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন, যেমন অপ্রয়োজনীয় লাইট বন্ধ রাখা বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা। 

৫.সহজ রিচার্জ পদ্ধতি

প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করা তুলনামূলক সহজ। মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে বা বিদ্যুৎ অফিস থেকে সহজেই রিচার্জ করা যায়। এছাড়া, অনেক সময় বিক্রেতা বা এজেন্টদের কাছ থেকে সরাসরি মিটার রিচার্জ করা যায়। এর ফলে গ্রাহকরা সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে সক্ষম হন এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনো বিঘ্ন ঘটে না।

৬. কোনো বিল সংগ্রাহকের প্রয়োজন নেই

পোস্ট-পেইড মিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাস শেষে বিল সংগ্রাহক আসতে হয় বা অনলাইনে বিল দিতে হয়। তবে প্রি-পেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিলের কোনো চিন্তা থাকে না। রিচার্জ করা হয়ে গেলে গ্রাহক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিরও খরচ কমে আসে, কারণ তাদের আর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহের প্রয়োজন হয় না।

৭. স্বয়ংক্রিয় সংযোগ ও বিছিন্নকরণ

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হলো স্বয়ংক্রিয় সংযোগ ও বিছিন্নকরণ ব্যবস্থা। যখন মিটারে রিচার্জের টাকা শেষ হয়ে যায়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং নতুন করে রিচার্জ করার পর পুনরায় সংযোগ চালু হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় গ্রাহকদের আলাদা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা পুনঃসংযোগ করতে হয় না।

৮. জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ লোন পাওয়া যায় 

প্রি- পেইড মিটারে রিচার্জ শেষ হয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে নিদির্ষ্ট পরিমাণ লোন পাওয়া যায়। এতে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে রিচার্জের পর লোনের টাকা কেটে রাখা হয়। 

প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের অসুবিধা

প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটারের অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তির কারণ হতে পারে। নিচে প্রি-পেইড মিটারের কয়েকটি প্রধান অসুবিধা উল্লেখ করা হলো:

১. রিচার্জ না করলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, রিচার্জ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ, আপনি যদি নির্ধারিত সময়ে টাকা রিচার্জ করতে না পারেন, তাহলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মাঝরাতে বা বিদ্যুৎ অফিস বন্ধ থাকাকালীন সময়ে এই সমস্যা হতে পারে, যখন রিচার্জ করা সম্ভব নয়। এতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে পরিবারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।

২. ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতা

অনেক সময় প্রি-পেইড মিটার রিচার্জের জন্য ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা দেখা যায়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ইন্টারনেট সেবা ভালো নয়, সেখানে গ্রাহকরা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট সেবা প্রয়োজন হয়, যা সবসময় স্থিতিশীল থাকে না। কাছাকাছি যাদের বিদ্যুৎ অফিস থাকে না, তাদের মোবাইল ব্যাংকিং এর উপর নির্ভর হতে হয়। 

৩. অগ্রিম টাকা প্রদান

প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করতে হলে গ্রাহকদের অগ্রিম টাকা প্রদান করতে হয়। এটি অনেকের জন্য একটি অসুবিধার কারণ হতে পারে, কারণ তারা যদি মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিতে পারেন, তাহলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। পোস্ট-পেইড মিটারে বিল মাস শেষে দেওয়া হয়, যা অনেকের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।

৪. রিচার্জ কেন্দ্রের অভাব

অনেক এলাকায় প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য পর্যাপ্ত কেন্দ্র নেই। গ্রামীণ বা দূরবর্তী এলাকায় বিশেষ করে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। যেখানে গ্রাহকরা মিটার রিচার্জ করার জন্য অনেক দূরে যেতে বাধ্য হন, যা সময়সাপেক্ষ এবং অসুবিধাজনক।

৫. তথ্য ও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা

প্রি-পেইড মিটার একটি প্রযুক্তিনির্ভর সিস্টেম। কিন্তু অনেক সময় মিটারের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া, ডিভাইসের ত্রুটি, বা অন্য কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় তাৎক্ষণিক সমাধান না পাওয়ায় গ্রাহকদের অসুবিধায় পড়তে হয়। অনেকে এর ব্যবহার না জানার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে। 


প্রি-পেইড বিদ্যুৎ মিটার একটি আধুনিক প্রযুক্তি যা বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা যায়, বকেয়া বিলের ঝামেলা এড়ানো যায়, এবং গ্রাহকদের সাশ্রয়ী ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন রিচার্জ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, এবং রিচার্জ কেন্দ্রের অভাব। তাই প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের আগে এর সুবিধা ও অসুবিধা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow