ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় ইলন মাস্ক
কিভাবে ইলন মাস্ক হয়ে উঠলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ইলন মাস্কের জীবনী ও ব্যবসায়িক কৌশলগুলো অনুশীলন করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ব্যক্তি।
![ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় ইলন মাস্ক](https://www.chtdaily.com/uploads/images/202412/image_870x_6762983e230b9.jpg)
ইতিহাসে সম্পদের মাপকাঠিতে ধনী ব্যক্তিদের তালিকা সবসময়ই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম এবং ব্যবসায়িক দক্ষতার মাধ্যমে অসংখ্য সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি-বিশ্বে ইলন মাস্ক এক অনন্য নাম। তার সম্পদের পরিমাণ এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব তাকে ইতিহাসের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। ইলন মাস্কের জীবনী, ব্যবসায়িক সফলতা এবং সম্পদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন।
ইলন মাস্কের জীবনী
ইলন মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া শহরে। তার বাবা ছিলেন একজন ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা ছিলেন একজন মডেল। শৈশব থেকেই ইলন মাস্কের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি নিজের প্রথম ভিডিও গেম বিক্রি করেন। ১৯৮৮ সালে, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কানাডায় পাড়ি জমান এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হন।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করার পরিকল্পনা থাকলেও, মাত্র দুই দিন পর তিনি তা ছেড়ে দেন এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর তার জীবন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে।
ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সফলতা
ইলন মাস্কের সম্পদের মূল ভিত্তি তার অসংখ্য প্রযুক্তিগত উদ্যোগ ও ব্যবসা। তার প্রধান ব্যবসাগুলো হলো:
১. পেপাল (PayPal):
ইলন মাস্ক তার প্রথম বড় সফলতা অর্জন করেন পেপালের মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে তিনি X.com নামে একটি অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেন, যা পরবর্তীতে পেপালের সঙ্গে মিলে যায়। ২০০২ সালে, ই-বে পেপালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়, যার একটি বড় অংশ ইলন মাস্কের ছিল।
২. স্পেসএক্স (SpaceX):
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্পেসএক্স হলো ইলন মাস্কের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর একটি। মহাকাশ গবেষণাকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ইতোমধ্যেই সফলভাবে বহু রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। ফ্যালকন ৯ এবং স্টারশিপ-এর মতো প্রকল্প স্পেসএক্সকে মহাকাশ গবেষণায় অগ্রগামী করেছে। ইলনের স্বপ্ন হল মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপন।
৩. টেসলা (Tesla):
ইলন মাস্কের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো টেসলা। যদিও টেসলার প্রতিষ্ঠাতা তিনি নন, ২০০৪ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিয়ে তিনি টেসলাকে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্বনেতায় পরিণত করেছেন। টেসলার জনপ্রিয় মডেল, যেমন মডেল এস, মডেল ৩, মডেল এক্স এবং মডেল ওয়াই, বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে বিপ্লব এনেছে।
৪. সোলারসিটি (SolarCity):
সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সোলারসিটি একটি বড় নাম। ২০০৬ সালে ইলন মাস্কের সহোদররা এটি প্রতিষ্ঠা করলেও, মাস্ক ছিলেন এর প্রধান প্রেরণাদাতা। পরবর্তীতে এটি টেসলার সঙ্গে একীভূত হয়।
৫. নিউরালিঙ্ক (Neuralink) এবং বোরিং কোম্পানি (The Boring Company):
মানুষের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে স্নায়ুবিজ্ঞানকে উন্নত করার লক্ষ্যে নিউরালিঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, যানজট সমস্যা সমাধানে বোরিং কোম্পানি টানেল নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।
এছাড়া বর্তমানে এআই এর মতো অসাধারণ কিছু উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন ইলন মাস্ক।
ইলন মাস্কের সম্পদ বৃদ্ধির কারণ
শীর্ষ ধনী ব্যক্তির তালিকায় থাকা ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ সর্বকালের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর নিট সম্পদের মূল্য এখন প্রায় ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স সূচকের ভিত্তিতে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এমন তথ্য জানান।
এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে শীর্ষ ধনীর স্থানটিও দখল করে নিয়েছেন ইলন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর টেসলার শেয়ারদর বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ইলন মাস্কের সম্পদ। মার্কিন নির্বাচনের পর থেকে টেসলাম শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। মূলত নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের সাথে ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় বিনিয়োগকারীদের তার ব্যবসাতে বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা বেড়েছে। তাছাড়া সম্প্রীতি ইলন মাস্ক ট্রাম্প সরকারের কর্মদক্ষতা বিভাগের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
ইলন মাস্কের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সমালোচনাও রয়েছে। তার কিছু কর্মকাণ্ড, যেমন টুইটারে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ব্যবসায়িক কৌশল, অনেক সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবুও, তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সাফল্য তাকে সময়ের অন্যতম চর্চিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার সম্পদ এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা তাকে শুধু ইতিহাসের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থানেই স্থাপন করেনি, বরং তাকে ভবিষ্যতের রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইলন মাস্ক প্রমাণ করেছেন যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী মনোভাব একজন ব্যক্তিকে বিশ্বের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত করতে পারে।
What's Your Reaction?
![like](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/like.png)
![dislike](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/dislike.png)
![love](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/love.png)
![funny](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/funny.png)
![angry](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/angry.png)
![sad](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/sad.png)
![wow](https://www.chtdaily.com/assets/img/reactions/wow.png)