খাগড়াছড়ির যে দর্শনীয় স্থান সমূহ আপনাদের মুগ্ধ করবে

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ যেমন আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, স্বর্গের সিড়ি ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানুন

Oct 28, 2024 - 13:01
 0  12
খাগড়াছড়ির যে দর্শনীয় স্থান সমূহ আপনাদের মুগ্ধ করবে
খাগড়াছড়ির যে দর্শনীয় স্থান সমূহ আপনাদের মুগ্ধ করবে

খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় একটি জেলা। খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থানসমূহ দেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। পাহাড়, ঝর্ণা, নদী এবং উপজাতি সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠা খাগড়াছড়ি ভ্রমণকারীদের জন্য অপরিসীম রোমাঞ্চের সুযোগ করে দেয়। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতি তার নিজস্ব সৌন্দর্য দিয়ে আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই জেলার প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে ঘিরে যে অপার সম্ভাবনা এবং সৌন্দর্য রয়েছে, তা একবার ঘুরে দেখার মতো। মেঘের রাজ্য সাজেক ছাড়াও আর কি কি দর্শনীয় স্থান আপনাদের মুগ্ধ করবে, সে সম্পর্কে জানুন। 

আলুটিলা গুহা
খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে আলুটিলা গুহা অন্যতম। এই গুহাটি খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং রোমাঞ্চকর পথ ভ্রমণকারীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দেয়। এই গুহাটি "মৃত্যুঙ্গুহা" নামেও পরিচিত, কারণ এর অন্ধকারাচ্ছন্ন গঠন ও রহস্যময় পরিবেশ।

গুহার ভেতর প্রবেশ করলে দেখবেন একটি প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ, যা প্রায় ৩৩১ ফুট লম্বা এবং গভীরতায় মুগ্ধ করে। এই গুহায় প্রবেশের সময় টর্চ ব্যবহার করা হয়, কারণ গুহার ভেতরের অন্ধকার যেন অন্যরকম এক রহস্যময় অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এখানকার ঠাণ্ডা পরিবেশ এবং পাহাড়ি গঠন সব মিলিয়ে পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। গুহা থেকে বের হয়ে চারপাশের সবুজ পাহাড় এবং ঝর্ণা দেখে মন শান্ত হয়ে যায়।

রিছাং ঝর্ণা
খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই অবস্থিত রিছাং ঝর্ণা, যা পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা এক মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা। শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে এই ঝর্ণাটি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। ঝর্ণার পানি উঁচু পাহাড় থেকে নিচে বয়ে আসে, যা দেখতে অনেকটা স্বচ্ছ কাঁচের মতো মনে হয়। রিছাং ঝর্ণা বিশেষ করে বর্ষাকালে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়, কারণ এই সময় ঝর্ণার পানি পূর্ণ শক্তিতে প্রবাহিত হয়।

রিছাং ঝর্ণার আশেপাশে অনেক স্থানীয় হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা আরাম করে খাবার খেতে পারেন এবং প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে পারেন। ঝর্ণার পানিতে গোসল করার সুযোগও পর্যটকদের জন্য একটি বাড়তি রোমাঞ্চ যোগ করে। ঝর্ণার স্রোতে হেঁটে বেড়ানো এবং তার সাথে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

হাজাছড়া ঝর্ণা
খাগড়াছড়ির আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান হলো হাজাছড়া ঝর্ণা। এটি দীঘিনালা এলাকার কাছে অবস্থিত এবং ঝর্ণাটির সৌন্দর্য পাহাড় ও সবুজ বনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। স্থানটি শান্তিপূর্ণ এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ স্থান, কারণ ঝর্ণার চারপাশে সবুজ বনানী, পাখির কিচিরমিচির আর পাহাড়ি বাতাস এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করে।

হাজাছড়া ঝর্ণায় পৌঁছানোর জন্য পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটতে হয়, যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। ঝর্ণার পানির স্রোত খুব বেশি জোরালো না হলেও এর শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের মন জয় করে নেয়। এখানে বসে প্রকৃতির শীতল বাতাসে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত অনুভূতি হবে। এটি খাগড়াছড়ির একটি নিস্তব্ধ জায়গা, যেখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

হর্টিকালচার পার্ক
খাগড়াছড়ি জেলা শহর হতে ৩ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় হার্টিকালচার হেরিটেজ পার্ক। হর্টিকালচার পার্কের অভ্যন্তরে রয়েছে শিশুদের খেলাধুলা এবং বড়দের সময় কাটানোর জন্য মনোরম পরিবেশ। নানা নান্দনিক নকশা দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কের চারপাশ। পাশাপাশি নদীতে নৌকা নিয়ে ঘোরারও থাকছে সুযোগ। পার্কটি শহর থেকে বেশ দূর না হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায় তাদের পরিবার, বন্ধু কিংবা একাকিত্ব কাটাতে। 

শতভিষা ঝর্ণা
শতভিষা ঝর্ণা স্থানীয়ভাবে সাতভাই ঝর্ণা নামে পরিচিত, খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে অনন্য ঝর্ণাগুলোর একটি। দীঘিনালা থেকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঝর্ণাটি পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাঁটার পর দেখা যায়। ঝর্ণার সাতটি পৃথক ধারা থেকে পানি ঝরছে, যা এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে। সাতটি ধারা থেকে প্রবাহিত হওয়া পানির শব্দ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।

সাতভাই ঝর্ণার আশেপাশের পরিবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং প্রকৃতির রূপ উপভোগ করার জন্য আদর্শ স্থান। বিশেষত বর্ষাকালে ঝর্ণার পানি পূর্ণ বেগে প্রবাহিত হয় এবং তার চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আরও বেশি মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। যারা প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে চান, তাদের জন্য সাতভাই ঝর্ণা এক দারুণ গন্তব্য।

হাতিমাথা
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের একটি পাহাড়ি পথের নাম হাতিমাথা। যা মায়ুং কপাল নামেও পরিচিত। পাহাড়ের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে হয়। সেখানকার ভোরের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ সকল পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সেখানকার গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধার্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কতৃক ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার সিড়ি তৈরি করা হয়, যা অনেকের কাছে স্বর্গের সিড়ি নামে পরিচিত। 

পানছড়ি অরণ্য কুঠির 
খাগড়াছড়ি জেলার পানিছড়ি উপজেলার গভীর অরণ্যে প্রায় ৬৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই কুঠির। সেখানে রয়েছে ৫০ ফুট বিশিষ্ট নান্দনিক এক বৌদ্ধ মূর্তি। পাশাপাশি সেখানকার নিরিবিলি পরিবেশ এবং ছোট ছোট টিলা এবং পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা কুঠির সকলের আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু। বৌদ্ধ মূর্তির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অবস্থানে আছে এই কুঠিরের মূর্তি। এই দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ এবং বৌদ্ধ মূর্তি দেখতে ভিড় জমায় নানা ধর্মের মানুষ। 


খাগড়াছড়ি জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। যারা পাহাড়, ঝর্ণা এবং প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, তাদের জন্য খাগড়াছড়ি নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ স্থান।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow