কেমন হবে এবারের শীতকাল জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে, যেটার খুব একটা তারতম্য হয়নি এবারও বলছেন, আবহাওয়াবিদরা।

Oct 29, 2024 - 16:46
Nov 13, 2024 - 12:21
 0  7
কেমন হবে এবারের শীতকাল জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা
কেমন হবে এবারের শীতকাল জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে, যেটার খুব একটা তারতম্য হয়নি এবারও বলছেন, আবহাওয়াবিদরা।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি কিছুটা বদলেছে যার ফলে শীতকালের সময় এবং ধরন ঠিক আগের মতো হচ্ছে না।

শীত শুরু হবে কখন?

দেশের স্বাভাবিক নিয়মে সাধারণত  ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সময়কালকে শীতকাল হিসেবে ধরা হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে,  স্বস্তিদায়ক তাপমাত্রা বলতে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বোঝানো হয়।

ঘুর্ণীঝড় ‘মিগজাউমের' প্রভাবে এই বৃষ্টিপাতের পর এই মাসের ১০ তারিখের পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করবে বলে জানান বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অন্যতম আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। উত্তরাঞ্চলে কোথাও কোথাও আবার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানান মিঃ মল্লিক।যেটাকে একপ্রকার  শৈত্যপ্রবাহ হিসেবেও বলা যায় কারণ, শীতকালে যদি ২.৬ থেকে শুরু করে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গেলে সেটাকে  শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয় ।

গত ৩০ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ অনুসারে তারা দেখেছেন, ডিসেম্বর মাসে সাধারণত এক থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে আরেক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুল মান্নানের মতে শীতকালের শুরুটা মূলত ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে  অর্থাৎ ১৬ তারিখের পর কোনো একটা সময় থেকে  শুরু হবে বলে মনে করছেন।এই মাসের দ্বিতীয়ার্ধ, রাতের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামবে অর্থাৎ ১৬ তারিখের পর থেকে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে প্রকৃত অর্থে শীতকাল শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন তিনি ।

তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের পর তাপমাত্রা হঠাৎ করে নীচে নেমে গেলে শীত অনুভূত হবে এটাই স্বাভাবিক তবে প্রকৃত অর্থে এটি শীতকাল নয়।

আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডল পুরোপুরি শুষ্ক হয়ে সর্বনীম্ন তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি  শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি সৃষ্টি  হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন  আবহাওয়াবিদ মিঃ মান্নান।

 ‘‘চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সেটি দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে “ বলে জানান মিঃমান্নান।

কেমন হবে এবারের শীতকাল?

বিশ্বের তাপমাত্রার রেকর্ড সংরক্ষণ করা শুরু হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই বছরের জুন মাসে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল ।

ইউরোপ ও আমেরিকা মতো শীতপ্রধান দেশগুলোতে এই বছর মানুষ তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেছে ।  এই বছরে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রার উচ্চতম রেকর্ড ছোঁয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই ‘এল নিনো’ নামের প্রাকৃতিক আবহাওয়া চক্র।

এই ‘এল নিনো’র কারনে একই সাথে বিশ্বের বাড়তে থাকা তাপমাত্রার প্রভাবে এবারের শীতকালটা আগের শীতকালগুলোর তুলনায় কিছুটা উষ্ণ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

’এল নিনো’ সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে যা আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এল নিনো সক্রিয় থাকার ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে সাধারণত বেশি তাপমাত্রা দেখা যায়, বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মিঃ মল্লিক।

যখন তাপমাত্রা উর্ধমুখী হয়, প্রতি তিন থেকে সাত বছরের মধ্যে একবার এই এল নিনো দেখা দেয়।

গত ৩০ বছরের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় হিসেবে ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা  থাকে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস । তবে গত পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় চিত্রের দিকে লক্ষ্য করলে তাপমাত্রা বাড়ার  প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

এবছরে ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪.৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে বলে ধারনা করছেন মিঃ মল্লিক।

আবার বিগত ৩০ বছরের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের যে  সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে সেটাও এবার সামান্য বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে  বলে জানালেন আবহাওয়াবিদরা। তবে এবারে যে তেমন শীত পড়বে না সেটা ভাবলেও অবশ্য ভুল হবে।

অবশ্য এ তথ্য  পুরো দেশজুড়ে যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয় তার একটা গড় হিসাব। অঞ্চলভেদে এই তাপমাত্রার তারতম্য হওয়াটা স্বাভাবিক।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আবহাওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুই আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না উল্লেখ করে মিঃ মান্নান বলছেন, "গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর এই সময়ে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।”

আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করলে সল্পকালীন সময়ের জন্য তীব্র শৈত্য প্রবাহ আসার সম্ভাবনাকেও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে, সামগ্রিকভাবে এবার শীতের সময় কিছুটা উষ্ণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন গত তিন মাসে পরপর কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ই তার প্রকৃত উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন।

শীতকালের সময়ের পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শীতকালের সময়ের ও কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ডিসেম্বর মাসে শীত কালের শুরু হওয়ার স্বাভাবিক সময় হিসেবে ধরা হলেও আগের তুলনায় শুরুর সময়টা পেছানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে শীতের প্রবণতা কম হলেও আবার অন্যদিকে শেষটা ফেব্রুয়ারি মাসের পরিবর্তে এখন মার্চের প্রথম সপ্তাহ নাগাদে শেষ হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

শীতকালের দৈর্ঘ্য যে কমছে তা লক্ষ্য করছেন অনেক আবহাওয়াবিদ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ‘‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর  হতে খুব একটা শীত অনুভব হয় না। এমনকি, গত কয়েক বছরে জানুয়ারি মাসেও আমাদের এক্সপেক্টশন অনুযায়ী শীতের অনুভূতি আসে নাই” বলছিলেন অনেকে।

এছাড়া আবহাওয়াবিদরা শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তিকালের পরিবর্তন ও লক্ষ্য করছেন । ২০১৫ সালের পর থেকে  শীতল রাত কত সময় ধরে চলবে তারও পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান মিঃ মল্লিক।

যেখানে তীব্র ও মাঝারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ কমে গেছে সে তুলনায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সময়কালটা বেড়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ভিত্তিতে অন্তত তিন দিন স্থায়িত্বকাল অনুযায়ী শৈত্যপ্রবাহকে নীম্নের তালিকা অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।

 অতি তীব্র – ৪ ডিগ্রির নিচে

তীব্র – ৪-৬ ডিগ্রি

মাঝারি – ৬-৮ ডিগ্রি

মৃদু – ৮ - ১০ ডিগ্রি

মাঝারি থেকে অতি তীব্র ধরণের তাপমাত্রার দিনসংখ্যা দিন দিন কমে আসছে  সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এখন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান মিঃ মল্লিক।

সাধারণত জানুয়ারি মাস নাগাদএকটি থেকে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র ধরণের শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা থাকে যেটা এবারও থাকবে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর্যন্ত মোটামুটি সঠিক তথ্য দেওয়া যায়।এর পর যত বেশি সময়ের হিসেব করা হয় তত সেটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে। পাঁচ দিনের আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করলে সেটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আর সাত দিন পর্যন্ত হলে সেটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে আসে বলছিলেন মিঃ মল্লিক।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow