অনিয়মিত বাঙালি - মুহাম্মদ আল ইমরান।
আমার শৈশবের কথা চিন্তা করলেই সেহাকাঠী গ্রামের কথা মনে পরে। আমি বলি সেহাকাঠী স্বর্গ। আমার আব্বুর কর্মজীবনের সুবাদে সেহাকাঠী গিয়েছিলেন। আমার জন্ম ঐ সেহাকাঠী। তাই বেশ কিছু শিক্ষা ওখানে পেয়েছি।
সেহাকাঠী স্কুলের পাশের বাজারের অধিকাংশ দোকান দেখতাম বিভিন্ন কাগজ ডিজাইনে সাজানে হত। দোকানদার তার ক্রেতাদের পরিবারে কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানাতেন। সব ক্রেতাদের এই কার্ড দেয়া হতো না। কার্ড দিয়ে পাওনা পরিষদ করলে মিষ্টি, নিমকি, মুড়ি সহ হরেকরকমের খাবার খাওয়ানো হতো এভাবে হালখাতা করা হত। আমি ছেলেবেলায় আম্মুর কাছে আক্ষেপের সুরে বলতাম আমরা কেন দোকানে পাওনা রাখি না? যদি আমাদের কাছে দোকানী পাওনা পেত তাহলে আমরাও সাজানো দোকানে গিয়ে মিষ্টি খেতে পারতাম!
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে মেলা হতো সেখান থেকে বিভিন্ন খেলনা কেনা। এক ধরণের পাখির গাড়ি পাওয়া যেত। যা লাঠি হাতে চালানো হতো। পাখির পায়ে চাকা ছিলো। সেই চাকা ঘুরলে শব্দ হতো। আর পাখির পাখা দুলতো। ঘোড়ার দৌড়ের আয়োজন থাকতো। সবাই কোলায়(কৃষি জমি) ভিড় করতো ঘোড়ার দৌড় দেখার জন্য। সেখানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার বিভিন্ন মুখরোচক খাবার বিক্রি করতো। গানের আসর, খেলাধুলা আরো কত কি ছিলো। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে সৃজনী বিদ্যানিকেতন, পবিপ্রবি, দুমকি, পটুয়াখালী- তে পড়ি তখন বাংলা নববর্ষের নানান আয়োজন দেখেছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
নতুন পোশাক যাতে লেখা "এসো হে বৈশাখ...", ঢোল, তবলা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র আঁকা। আহা কত স্মৃতি! আল্পনা করা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া। অনেকে পান্তা ভাতের সাথে পিয়াজ, শুকনো টালা মরিচ/সবুজ কাঁচা মরিচ কেমন যেন চিবিয়ে খেত। কাঁচা মরিচ চাবানোর শব্দ যেন শশা চাবানোর মত মনে হত।
...
কলেজ জীবন। এক বছর অনলাইনে আয়োজন করা হলো নববর্ষের অনুষ্ঠানের। জুম মিটিং এ শিক্ষকদের মুখ থেকে তাদের স্মৃতি শোনা, বাংলা নববর্ষের কথা শোনা। পরের বছর রমজানের ভিতরে কলেজে নববর্ষের আয়োজন করা হয়। এই সময়ে সামিয়া ম্যাডামের সহোযোগিতায় লিখি রম্য সংবাদ। তা নববর্ষের অনুষ্ঠানের দিন দুইটি মেয়ে পাঠ করে। আঞ্চলিক ভাষায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বরিশালের হয়ে কথা বলি। সন্ধ্যার সময় ইফতার করি কলেজে।
...
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। ড. কামালউদ্দিন কবির স্যার জিজ্ঞেস করলেন, " আজকে কত তারিখ?" উত্তরে তারিখ বললাম। কিন্তু আমার তারিখ বলা সঠিক হলো না যখন স্যার পূনরায় বললেন "আজকের বাংলা তারিখ কত?" আমি আমার শৈশবের দিনগুলোর কিছু কথা বললাম তাতে বোঝা যায়- আমি বেশ বাংলা বর্ষের সাথে আছি! কিন্তু একি কান্ড আমি বাংলা তারিখ জানি না। যাকে বলা যায় অনিয়মিত বাঙালি। অবশ্য পরে স্যার বাংলা তারিখ জানিয়েছেন। বাংলা নববর্ষ আসলে কয়েকদিন আগে জানতাম ইংরেজি ঐ তারিখে বাংলা নতুন বছর। সেটা পালন করবো, লোকজনকে শুভেচ্ছা জানাবো এতেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। বলে রাখা ভালো যে, আমার ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে তবে সেটা তারিখ অনুযায়ী নয়। কিন্তু স্যারের লেকচারের দিন থেকেই আমি ডায়েরি লিখি তারিখ অনুযায়ী। সেজন্য বাংলা, ইংরেজি তারিখের সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ হয়। শারমিন ম্যাডামের কথা এরকম- গাছের শিকড় যত গভীর যায় গাছ তত বেশি মজবুত হয়। তাই বাংলাকে ভালোভাবে জানতে হবে নিজেকে মজবুত করতে হলে।
তাই আসুন একদিনের জন্য বাঙালি না হয়ে আমাদের আত্মপরিচয়ে বাংলা যেমন আছে, সেই বাংলাকে ধারণ করে সমৃদ্ধ করি। সেই ধারণ করা শুরু হোক বাংলা তারিখ থেকে।
~ মুহাম্মদ আল ইমরান।
১লা বৈশাখ ১৪৩১ | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
What's Your Reaction?






