২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা

২০২৪ সালে যারা অনন্য অবদানের ফলে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন, সেসব বিজয়ীদের তালিকা জানুন।

Oct 28, 2024 - 13:18
 0  6
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা

নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে ১৯০১ সাল থেকে প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, শান্তি এবং অর্থনীতিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৪ সালেও এই পুরস্কারগুলি কৃতিত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়েছে, যারা মানবজাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে ২০২৪ সালের নোবেল বিজয়ীদের নাম এবং তাদের কাজ নিয়ে আলোচনা করব।

পদার্থবিজ্ঞান: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অগ্রগতি
পুরস্কারপ্রাপ্ত: জন হপফিল্ড (যুক্তরাষ্ট্র), জিওফ্রে হিন্টন (যুক্তরাজ্য/কানাডা)

২০২৪ সালের নোবেল পদার্থবিজ্ঞান পুরস্কারটি দুই বিজ্ঞানী জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রে হিন্টনের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে তাদের যুগান্তকারী কাজের জন্য পরিচিত। হপফিল্ডের "হপফিল্ড নেটওয়ার্ক" একটি পুনরাবৃত্ত নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেল, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিস্তর প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে, জিওফ্রে হিন্টন "ডিপ লার্নিং" এবং "ব্যাকপ্রোপাগেশন অ্যালগরিদম" উদ্ভাবনের মাধ্যমে এআই গবেষণায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।

এই দুটি কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে এআই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক মডেলিং ইত্যাদিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। হিন্টনকে প্রায়শই "এআই এর গডফাদার" হিসেবে অভিহিত করা হয়, যার গবেষণা এআই এবং মেশিন লার্নিং সিস্টেমের উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।

রসায়ন: প্রোটিন ডিজাইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
পুরস্কারপ্রাপ্ত: ডেভিড বেকার (যুক্তরাষ্ট্র), ডেমিস হাসাবিস (যুক্তরাজ্য), জন জাম্পার (যুক্তরাজ্য)

২০২৪ সালে রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। তাদের গবেষণা প্রোটিনের গঠন পূর্বাভাস এবং কৃত্রিম প্রোটিন ডিজাইন সম্পর্কিত। ডেভিড বেকার কৃত্রিম প্রোটিন তৈরির জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে বিপ্লব এনেছে।

ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারের "AlphaFold" প্রযুক্তি বায়োলজিক্যাল প্রোটিনের সঠিক কাঠামো পূর্বাভাস দিতে সক্ষম, যা ৫০ বছর ধরে বিজ্ঞানীদের জন্য একটি জটিল সমস্যা ছিল। AlphaFold প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রোটিনের গঠন জানতে পারছেন, যা ওষুধ আবিষ্কার এবং চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি এনে দিচ্ছে।

এই গবেষণাগুলো জৈব রসায়ন, জীববিদ্যা এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বহু জটিল রোগের চিকিৎসায় সহায়ক হবে।

চিকিৎসাশাস্ত্র: জিন নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোআরএনএ
পুরস্কারপ্রাপ্ত: ভিক্টর অ্যামব্রস (যুক্তরাষ্ট্র), গ্যারি রুভকুন (যুক্তরাষ্ট্র)

২০২৪ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন ভিক্টর অ্যামব্রস এবং গ্যারি রুভকুন, যারা মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কার এবং এর মাধ্যমে জীবদেহে জিন নিয়ন্ত্রণের ভূমিকার জন্য সম্মানিত হন। মাইক্রোআরএনএ হলো একটি ছোট আরএনএ অণু, যা জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই আবিষ্কারটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসার নতুন পথ দেখিয়েছে।

তাদের গবেষণা জেনেটিক চিকিৎসার উন্নয়ন এবং লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপির ক্ষেত্রে একটি বিশাল অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে আরও কার্যকর এবং সুনির্দিষ্ট থেরাপি বিকাশে সহায়ক হবে।

সাহিত্য: হান কাংয়ের তীব্র কাব্যিক গদ্য
পুরস্কারপ্রাপ্ত: হান কাং (দক্ষিণ কোরিয়া)

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং। তার তীব্র কাব্যিক গদ্যের জন্য, যা ঐতিহাসিক ট্রমা এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। হান কাং এর লেখায় মানুষের দুর্দশা, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অতীতের অন্ধকার সময়ের স্মৃতি খুবই শৈল্পিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

তার বিখ্যাত উপন্যাস "দ্য ভেজিটারিয়ান" এবং "হিউম্যান অ্যাক্টস" কোরিয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো এবং মানবিক দুর্ভোগকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হান কাংয়ের লেখনী আধুনিক সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে মানব মনের জটিলতা ও অনুভূতির অন্বেষণ করা হয়েছে।

শান্তি: পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্ব গঠনের জন্য প্রচেষ্টা
পুরস্কারপ্রাপ্ত: নিহোন হিদানকিয়ো (Nihon Hidankyo)

২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার জাপানের নিহোন হিদানকিয়ো সংগঠনকে প্রদান করা হয়। এটি হিরোশিমা এবং নাগাসাকি পারমাণবিক বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন, যারা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করে এবং পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গঠনে কাজ করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রচেষ্টা পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নীতি তৈরিতে সাহায্য করেছে।

অর্থনীতি: প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও উন্নয়ন
পুরস্কারপ্রাপ্ত: দারন আসেমোগ্লু (যুক্তরাষ্ট্র), সাইমন জনসন (যুক্তরাজ্য), জেমস রবিনসন (যুক্তরাষ্ট্র)

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান দারন আসেমোগ্লু, সাইমন জনসন এবং জেমস রবিনসন। তারা গবেষণা করেছেন কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এবং কীভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাঁদের গবেষণা দেখিয়েছে যে রাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক উন্নয়নে সহায়ক হয়।

এই গবেষণাগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীতি নির্ধারণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে পারে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এই কাজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখে বিশ্বকে আরও সমৃদ্ধ এবং উন্নত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের গবেষণা, সাহিত্যকর্ম এবং শান্তি প্রচেষ্টাগুলো মানবজাতির অগ্রগতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এই ধরণের আরো কন্টেন্ট পড়ুন

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow