শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে কিছু গুরত্বপূর্ণ টিপস

প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিশু থেকে শুরু করে সকলের এই প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী। কিভাবে শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করাবেন তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো।

Oct 29, 2024 - 11:09
Nov 15, 2024 - 10:27
 0  10
শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে কিছু গুরত্বপূর্ণ টিপস
শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে কিছু গুরত্বপূর্ণ টিপস

আপনার সন্তানের সাথে প্রযুক্তির পরিচয় করিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা আবশ্যক। ব্যক্তি, সমাজভেদে নানা রকম পরামর্শ থাকতে পারে, তবে সবসময় ইতিবাচক পরামর্শগুলোই অনুসরণ করা উচিত। যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বর্তমানে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে, তাই ছোটবেলা থেকেই এর সাথে ভালো একটা পরিচিতি গড়ে তোলা হলে তাদের জন্যই ভালো। পিতামাতা এবং শিক্ষকদের উচিত শিশুদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বিকাশে সহায়তা করা। যা তাদের ভবিষ্যতে সফল হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এখানে প্রযুক্তির ব্যবহারে অভিভাবক হিসেবে আপনার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: 

টিপ ০১: প্রযুক্তিকে আকষর্ণীয় করে তোলা

শিশুদেরকে শিক্ষামূলক অ্যাপসগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে যা তাদের পড়াশোনার নানা বিষয় আয়ত্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

টিপ ০২: সময় সীমিত করুন

শিশুদের ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স- এর সুপারিশ মতে ২ বছর বয়স  পর্যন্ত শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। তাদের স্ক্রিন বা ডিভাইস ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং অতিরিক্ত সময় যেন ডিভাইস ইউজ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য একটি টাইম-রুটিন থাকা জরুরি। মনে রাখতে হবে যে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ও মানসিক বিকাশ যথাযথ করতে সময়ের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরী। 

টিপ ০৩: শিশুদের কম্পিউটার ব্যবহারের মৌলিক বিষয়গুলি শেখান

ডিজিটাল বিশ্বে টিকে থাকতে আপনার সন্তানের অবশ্যই কম্পিউটার সম্পর্কে মৌলিক ধারনা থাকতে হবে। তাই তাদের কম্পিউটার টাইপিং, ইন্টারনেট ব্যবহার, ই-মেইল তৈরিসহ মৌলিক আরও বেশ কিছু স্কিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। যদি নিজের কোন দুর্বলতা থাকে তাহলে নিকটবর্তী ভালো কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের মাধ্যমে আপনার সন্তানের সেই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে তুলুন। 

টিপ ০৪: ইন্টারনেট নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ দিন

প্রযুক্তির সাথে অনলাইন নিরাপত্তা বা সাইবার সিকিউরিটি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের অবশ্যই ইন্টারনেট নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের শিখাতে হবে এবং সচেতন করতে হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, অহেতুক লিঙ্কে প্রবেশ না করা ইত্যাদি বিষয়ে শিশুদের সতর্ক থাকতে বলতে হবে এবং তাদের সাথে এসবের ভালো-খারাপ দিকগুলো আলোচনা করতে হবে। আবেগের বসে ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক তথ্য ইন্টারনেটে শেয়ার না করার বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে হবে। 

টিপ ০৫: সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করুন

শিশুরা নানা রকম সৃজনশীলতা দেখাতে চায়। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এটি ব্যতিক্রম নয়। অ্যানিমেশন, ফিল্ম, ডিজিটাল ডিজাইনসহ, কোড করে ছোট ছোট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তাদের দারুণ ভাবে উৎসাহিত করুন। এ কাজের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার এবং অ্যাপসগুলির সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিন।

টিপ ০৬: ডিজিটাল নাগরিকত্ব শিখানো

ডিজিটাল নাগরিকত্বের মধ্যে প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার এর দক্ষতা অর্জন করা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের কাছে প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরুন এবং সমাজে এর প্রভাব কী তা জানান। তাদের আরও বুঝাতে হবে যে, নীতিহীন প্রযুক্তি জীবনের স্বাভাবিকগতি ও সৃজনশীলতা অর্জনের জন্য বড় বাধা। তাই আধুনিকভাবে সুনাগরিক হওয়া বা প্রযুক্তিগত বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনে ভূমিকা রাখা সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত। 

টিপ ০৭: সহযোগিতামূলক শিক্ষায় উৎসাহিত করুন

দলগত শিক্ষা শিশুদের সামাজিক এবং মানসিক দক্ষতা বিকাশের সাথে সাথে প্রযুক্তিরও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি কার্যকর উপায়। প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন বাড়ির কাজ করতে দলগতভাবে করার জন্য উৎসাহিত করুন এবং সতর্ককতার সাথে তাদের দলগত নৈতিক আচরণ খেয়াল করুন। দলগতভাবে কাজ করলে কাজ এবং যোগাযোগ দক্ষতা দুটোই বৃদ্ধি পায়। 

টিপ ০৮: বয়স-উপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার করুন

শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বয়সের সামঞ্জস্যতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ছোটদের জন্য একটি ট্যাবলেট বা শিক্ষামূলক গেইম ব্যবহারের বিষয় বিবেচনা করা যায় যা তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশে ফোকাস করবে। শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের আরও জটিল সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মোট কথা,বয়স উপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে।

টিপ ০৯: সীমা সেট করুন

শিশুদের কাছে প্রযুক্তির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়সীমা এবং নির্দেশিকা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় কতগুলো নিয়মের সেট তৈরি করুন এবং তাদের সাথে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করুন। যেমন, খাবারের সময় বা শুয়েশুয়ে ডিভাইস ব্যবহার না করে, বেশিরাত জেগে ডিভাইসগুলো ব্যবহার না করে ইত্যাদি। পড়াশোনা, খেলাধুলার মত প্রযুক্তিও একটি স্বাভাবিক স্কিল এবং সবগুলোর উপর যেন একটি স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় থাকে। 

টিপ ১০: যত্নশীল হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ

আমরা নানা রকম দামের বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করি। ডিভাইস কেনার সাথে অর্থ খরচের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা যাতে ঘনঘন ডিভাইস পরিবর্তনের এবং শখেরবশে দামী ডিভাইস কেনার বায়না না ধরে তার একটা পারিবারিক শিক্ষা তাদের  দিতে হবে। এতে করে তারা ডিভাইসের প্রতি যত্নশীল হবে। 

অল্প বয়সে শিশুদের প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উপকারী হতে পারে। কিন্তু দায়িত্বের সাথে যথাযথভাবে তা করাও গুরুত্বপূর্ণ। উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা নিশ্চিত করবেন যে, শিশুরা তাদের নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর রেখে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ডিজিটাল স্বাক্ষরতা এবং ডিজিটাল নাগরিকত্বের বিকাশ করে। একটি দায়িত্বশীল এবং চিন্তাশীল পদ্ধতিতে শিশুদের কাছে প্রযুক্তির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বাবা-মা এবং শিক্ষকরা ডিজিটাল যুগে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করতে পারেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow