সফল উদ্যোক্তা বেকার মনিরের সাফল্যের গল্প

সফল উদ্যোক্তা বেকার মনিরের সাফল্যের গল্প উদ্যোক্তা মুহাম্মদ মনির হোসেন একটি ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি ছেড়ে প্রায় ছয় মাস বেকার ছিলেন। এর আগে তিনি রাজধানীর মতিঝিলে একটি ভ্যানে করে আনারস বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন বেকারত্ব দূর করার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হলো না।

Oct 29, 2024 - 16:17
Nov 14, 2024 - 10:46
 0  7
সফল উদ্যোক্তা বেকার মনিরের সাফল্যের গল্প
সফল উদ্যোক্তা বেকার মনিরের সাফল্যের গল্প

সফল উদ্যোক্তা বেকার মনিরের সাফল্যের গল্প উদ্যোক্তা মুহাম্মদ মনির হোসেন একটি ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি ছেড়ে প্রায় ছয় মাস বেকার ছিলেন। এর আগে তিনি রাজধানীর মতিঝিলে একটি ভ্যানে করে আনারস বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন বেকারত্ব দূর করার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হলো না। তারপর মনির ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যোগ দেন। বিডিকলিং আইটি লিমিটেড নামে একটি আইটি কোম্পানি চালু করেছে। মতিঝিলে ভাড়া বাসায় ছোট্ট একটি ঘরে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন মনির হোসেন। বর্তমানে রাজধানীর বনশ্রীতে চারটি সার্ভিস নিয়ে এর কন্ডিশনিং চলছে। আর প্রতিষ্ঠানটিতে চার শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু এই পর্যায়ে পৌঁছাতে তাকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে পার হতে হয়েছে। মুহাম্মদ মনির হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়।

বাবা পেশায় একজন কৃষক। মনির ১৯৯৭ সালে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় তার এক মামা মনিরের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। মনিরের একটি ভান ছিল আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে স্কেল পরে চাকরি পাওয়া। কিন্তু ২০০০ সালে, তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমাতে প্রথম হন। এরপর উন্নত শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করা এবং ভর্তির অঙ্ক দেওয়ার মতো তার সাধ্য ছিল না।চাচাও আর সহযোগিতা করার পর্যায়ে ছিলেন না। মনিরের বাবা জমি বিক্রি করে ছেলেকে ৪০ হাজার টাকা দেন। এই টাকায় কোচিং শেষে গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ভর্তি হন মনির।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। মনির তার নিজের খরচ রোজগার করতে কোচিং ক্লাস নেওয়া শুরু করে। একসময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে ডুয়েট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কোচিং বন্ধ থাকায় কোচিং ক্লাস করানোর জন্য গাজীপুর থেকে ঢাকার কলাবাগানে আসেন। ২০০৬ সালে স্নাতক পাস করার পরে ঢাকার মিরপুরে চলে আসেন মনির। এছাড়াও তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৭ সালের সকালে, তিনি টেলিকম সেক্টরের আসু-কন্ট্রাক্টিং কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খান। বেতন না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। তিন মাস পর তিনি অন্য একটি সাদৃশ্য কোম্পানিতে চাকরি নেন। পরবর্তী সময়ে, মনির জাপানি ট্রান্সন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি এনইসি কর্পোরেশনে চাকরি পান, যেখানে তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। তারপরও, পারিবারিক জটিলতার কারণে তাকে হঠাৎ সেই চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তিনি চাকরি  হারানোর পর প্রায় ছয় মাস বেকার ছিলেন। বেকার হয়ে আসায় মনির বাসা ছেড়ে মতিঝিলে এক বন্ধুর সাথে মেসে থাকেন। সেই বন্ধুও বেকার ছিল। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তার বন্ধুও ধার দেনা করে চলতে হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসার চেষ্টা করেন।তারপর দুই বন্ধু মিলে একবার মতিঝিলে ভ্যানে করে আনারস বিক্রির পরিকল্পনা করেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

মনির হোসেনের একজন সহকর্মী এনইসি কর্পোরেশনে কাজ করার সময় খণ্ডকালীন ফ্রিল্যান্সিং করতেন। তার ভালো আয় হতো। অন্য কোন বিকল্প না থাকায় পরে, তিনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্যও ল্যাপটপ কেনা বা ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার জন্য তার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু কম্পিউটারের মাস্টারমাইন্ড মনির ছিলেন পরিশ্রমী এবং আত্মবিশ্বাসী। তাই তিনি হাল ছাড়েননি। মনির হোসেন বলেন, এক বন্ধুর কাছ থেকে ল্যাপটপ ধার করে ফ্রিল্যান্সিং শেখা শুরু করি। মাত্র দুই মাসে মধ্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ে একটি প্রোফাইল দাড়িয়ে যায়। নতুন চাকরির মাধ্যমে আয়ও বাড়ে। চাপ বাড়াতে অন্যদের সঙ্গে কিছু কাজও করতেন। এভাবে চলতে থাকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার ডলার  আয় করেন। ধীরে ধীরে মনিরের কাজ বাড়তে থাকে। একা একা এসব কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁর জন্য। তাই তিনি একটি নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

 ২০১৭ সালে, তিনি বিডিকলিং  আইটি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতেই পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ ও সাতজন শ্রমিক নিয়ে মতিঝিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তার কোম্পানির কন্ডিশনিং শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মনিরকে। মনিরের স্ত্রী সাবিনা আক্তার, যিনি এখন কোম্পানির প্রেসিডেন্ট, তিনিও তার কাজে সহযোগিতা করেছেন। ২০২০ সালে, মনির হোসেন করোনার চরম সময়ে তার অফিস মতিঝিল থেকে  বনশ্রীতে পরিবর্তন করেন। বর্তমানে বিডিকলিং-এর বনশ্রীতে চারটি আলাদা পরিষেবা রয়েছে। চার শতাধিক কর্মী সব সেবায় ফ্রিল্যান্সিং কাজ করছেন। মনির হোসেন ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০০ যুবকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তার সমিতি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে প্রতি মাসে দুই লাখের বেশি মার্কিন ডলার উপার্জন করছে। শ্রমিকদের প্রতি মাসে গড়ে এক কোটি টাকার বেশি বেতন দেওয়া হয়। মনির হোসেন বলেন,  বিডিকলিং আইটি ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ভিজ্যুয়াল এবং ক্রিয়েটিভ ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে। মনির হোসেন বর্তমানে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে দারুণ ঘটনা ঘটেছে। এটা অনেকটা সাগরে মাছ ধরার মত।

যাই হোক না কেন, এর জন্য প্রথমে কাজের জায়গার বৈধ প্রস্তুতি, ক্ষমতা এবং তথ্য প্রয়োজন।
মনির হোসেন বলেন, "আমাদের ১০ বছরের সম্পৃক্ততার সাথে আমরা কয়েকটি কোর্সের পরিকল্পনা করেছি। এর মাধ্যমে আমি গত জুলাই থেকে কিশোর-কিশোরীদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তার সম্ভাব্য ব্যবস্থা সম্পর্কে মনির হোসেন বলেন, তার সংস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে। তথ্য উদ্ভাবন সত্ত্বেও কৃষি ব্যবসা, বাসস্থান এবং একত্রিত এলাকা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow