বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা
১৯৭১ এ অস্থায়ী সরকার গঠন এবং অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির।
বাংলাদেশের রাজনিতিক শুরু হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের পর যখন দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ১৯৭১ এ অস্থায়ী সরকার গঠন এবং অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের প্রধান ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন এবং নির্বাহী (executive) ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। আইন প্রণয়ন করা হয় জাতীয় সংসদে। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর প্রণীত হয়, এবং এখন পর্যন্ত এতে সতেরোটি সংশোধনী যোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেনা শাসন এবং সেনা প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে । ইসলামী শক্তি এবং জঙ্গীবাদী শক্তীর উত্থানো কখনো কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবাভিত করেছে। রাজনীতির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনকল্যাণ। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। তারা সকল রূপ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দল থাকলরও যার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করেছে,
অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবে বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ দলসমূহের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সংযুক্ত রয়েছে। এরপর, তৃতীয় শক্তিটি হলো জাতীয় পার্টি যা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ বর্তমানে তিক্ত আকার ধারণ করেছে এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলন, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের জন্ম দিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে ছাত্র রাজনীতিও বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী উত্তরাধিকার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রায় সকল দলেরই অত্যন্ত সক্রিয় নিজস্ব ছাত্র সংগঠনের শাখা রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরকেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিকবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বেশ হতাশ।
সংসদীয় সরকার” বা “সংসদীয় সিদ্ধান্তে ভিত্তিক সরকার” একটি প্রকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সরকার একটি সংসদ বা সংসদের বিভিন্ন দলের বৈচিত্র্য উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এই প্রকার সরকার আমেরিকার সংযুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত, জাপান, আস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশেই প্রচলিত হয়।
এইবার জানা যাক সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বলতে কি বোঝায়
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা হলো একটি ডেমোক্রেটিক ব্যবস্থা যেখানে সরকারের সব কর্ম সংসদ এবং সংসদের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সংসদে বিভিন্ন দলের সদস্যরা সরকারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং সরকারের কাজে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এছাড়াও সংসদের মাধ্যমে সরকারকে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হয়, বিভিন্ন নীতিমালা সংশোধন করা হয় এবং নতুন আইন প্রণীত করা হয়।
সংসদীয় সরকার” বা “সংসদীয় সিদ্ধান্তে ভিত্তিক সরকার” এক প্রকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সরকার একটি সংসদ বা সংসদের বিভিন্ন দলের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এই প্রকার সরকার আমেরিকার সংযুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত, জাপান, আস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশেই প্রচলিত রয়েছে।
এই সরকার ব্যবস্থার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো;
জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকে।
মূল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নিকট ন্যস্ত থাকে; রাষ্ট্রপতি ক্ষমতার অধিকারী থাকে নামে মাত্র।
সকল সাংসদ ও মন্ত্রী সংসদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
সংসদের অধিকাংশের ভোটের ভিত্তিতে আইন পাশ হয়।
প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেন তাহলে সম্পূর্ণ সরকার ব্যবস্থা ভেঙে যাবে।
অবশেষে এইটাই বলা যায়যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে এবং দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।
What's Your Reaction?