ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়সমূহ

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। ডেঙ্গুর লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ, মশা নিয়ন্ত্রণের কৌশল এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয় নিয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন।

Nov 6, 2024 - 17:40
Dec 1, 2024 - 15:47
 0  32
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়সমূহ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়সমূহ

ডেঙ্গু বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় এবং একবার আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু রোগীদের প্রচুর জ্বর, শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং র‍্যাশের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। ডেঙ্গু মহামারির আকার ধারণ করতে পারে, এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ও সচেতনতা নিয়ে সমাজে ব্যাপকভাবে আলোচনা, উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

 

ডেঙ্গু কী এবং কীভাবে ছড়ায়?

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয়। এই ভাইরাসটির চারটি ভিন্ন ভিন্ন ধরন রয়েছে – DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। এই ভাইরাসগুলো মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিকটাস নামে পরিচিত দুই ধরনের মশা ডেঙ্গুর বাহক। এই মশাগুলো সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে এবং দিনের বেলা কামড়ায়। বর্ষার সময়ে এই মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। 

 

ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত ৪-১০ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। ডেঙ্গুর মূল লক্ষণগুলো হলো:

1. উচ্চ জ্বর – শরীরে তীব্র জ্বরের সাথে প্রচণ্ড কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।

2. শরীর ব্যথা ও জয়েন্ট ব্যথা – বিশেষত পিঠ, কাঁধ, কোমর ও হাঁটুর জোড়ায় তীব্র ব্যথা হয়।

3. মাথা ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা – ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা দেখা দেয়।

4. চামড়ায় লাল র‍্যাশ – শরীরে লাল র‍্যাশ দেখা দিতে পারে যা এক ধরনের অ্যালার্জি বা চুলকানির মতো অনুভূত হয়।

5. রক্তপাতের লক্ষণ – অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর গুরুতর অবস্থায় নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এ ছাড়াও রক্তক্ষরণের কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন দেখা যেতে পারে।

 

গুরুতর অবস্থায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে যা জীবন-সংহারী হতে পারে। তাই লক্ষণগুলো অনুভব করলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যেমন:

১. মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা

এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ঘরের আশেপাশে বা ছাদে জমে থাকা পানির জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। জমে থাকা পানি ও ভেজা জায়গাগুলো যেন এডিস মশার জন্য প্রজননক্ষেত্রে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

২. মশারি ব্যবহার

মশার কামড় থেকে বাঁচতে রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় থাকা মানুষদের দিনের বেলাতেও মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাজারে এখন অনেক **মশা প্রতিরোধক জাল** পাওয়া যায় যা দিনের বেলা ঘরে ও বাইরে ব্যবহার করা যায়।

৩. মশারোধী স্প্রে ও ক্রিম ব্যবহার

বিভিন্ন মশারোধী স্প্রে ও মশারোধী ক্রিম মশার কামড় থেকে রক্ষা করে। ঘর পরিষ্কার করার সময়ও মশারোধী স্প্রে ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়াও মশার কয়েল বা ইলেকট্রনিক মশা নিধন যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।

৪. ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা

বাসা বা অফিসের আশপাশে জমে থাকা ঝোপঝাড় মশার আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। তাই ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা, গাছের টবগুলোর পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা এবং বাইরে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করা জরুরি।

৫. ঢাকনাযুক্ত পানির ট্যাংক ব্যবহার

অনেক সময় পানির ট্যাংক বা খোলা পাত্রে মশা ডিম পাড়ে। তাই পানির ট্যাংক, পাত্র ও গ্লাসগুলো ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে রাখা উচিত, যাতে সেখানে পানি জমতে না পারে।

 

সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো, যাতে সাধারণ মানুষ ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন হয় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী হয়। 

 

স্কুল, কলেজ ও অফিসে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত, যাতে কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি বিজ্ঞাপন, পোস্টার এবং ব্যানার এর মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বার্তা পৌঁছানো যেতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয়

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সঠিকভাবে সচেতন থাকলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে যা করণীয় তা হলো:

1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, যাতে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

2. অত্যাধিক পানি পান করা জরুরি, কারণ ডেঙ্গুর সময় শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে।

3. চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করতে হবে।

4. স্বাভাবিক প্যারাসিটামল ছাড়া ব্যথানাশক ঔষধ না খাওয়াই ভালো, কারণ এ ধরনের ঔষধ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজে সচেতন হওয়া এবং আশেপাশের মানুষদেরও সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে হলে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow