গরিব অসহায় মানুষের ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী হলেন একজন বাংলাদেশী জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের বুকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী হলেন একজন বাংলাদেশী জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের বুকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। ডক্টর জাফরুল্লাহ রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তিনি অসংখ্য আহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। জাতির যে সমস্ত সাহসী বীর সূর্য সন্তান বর্তমানের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার নেপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাদের মধ্যে ডঃ জাফরুল্লাহ হলেন অন্যতম।
ডাঃ জাফরুল্লাহ চিকিৎসা খাতের প্রধান ব্যবসায়ী হতে পারতেন কিন্তু ডক্টর জাফরুল্লাহ মহাশয় ভিন্ন ধাতুতে গড়া এক লড়াকু মানুষ।তিনি নিজেকে গণমানুষের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নিয়োজিত করে
ডঃ জাফরুল্লাহ চোধুরীর জম্ম
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তিনি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ডঃ জাফরুল্লাহ চোধুরীর শিক্ষা জীবন
১৯৪১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ও পৈত্রিক নিবাস। বড় হয়েছেন ঢাকায়। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন বকশীবাজার স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা মেডিকেলে। ছাত্র ইউনিয়নের মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছিলেন সংবাদ সম্মেলন। ১৯৬৪ সালে ডিএমসি থেকে এমবিবিএস ও ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন। বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান
ইংল্যান্ডে থাকার সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রকাশ্যে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টার হামলার শিকার হয়েছিলো তাতে জাফরুল্লাহ চৌধুরীও ছিলেন একজন আরোহী।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আগরতলার মেলাঘরে তার গড়ে তোলা বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের ধারাবাহিকতাতেই স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগিতায় সাভারে গড়ে তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সখ্যতা ছিলো দুই সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এইচ এম এরশাদের সাথেও, যা নিয়ে তিনি আলোচিত-সমালোচিতও হয়েছিলেন।
ডঃ জাফরুল্লাহ চোধুরীর মৃত্যু
রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ক্ষণজন্মা মানুষটির বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী মঙ্গলবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানান।
মামুন মোস্তাফী বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনার তার জন্য দোয়া করবেন।’
দীর্ঘদিন কিডনি রোগসহ বিবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তার সহধর্মিণী নারীনেত্রী শিরীন হক ও দুই পুত্র-কন্যাকে।
পরিশেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের নায়ক, আইকন। সারাটা জীবন কাটিয়ে গেলেন কাউকে তোয়াক্কা না করে। জীবনকে ব্যয় করে গেলেন দেশের গরিব মানুষের জন্য। সৎ, নির্লোভ, নির্ভিক ৮১ বছরের চির তরুণ যাপন করে গেলেন সার্থক ও পরিপূর্ণ এক জীবন। অনুকরণীয়, অনুসরণীয় মানুষটির জীবনের কাহিনি মিথকেও হার মানায়।
What's Your Reaction?