খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার নানাবিধ কারণ বিশ্লেষণ

খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী না থাকা। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ। এডুলাইফ আইটি স্কুল এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলায় নিচ্ছে নতুন পদক্ষেপ।

Nov 11, 2024 - 13:04
Nov 11, 2024 - 13:07
 0  34
খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার নানাবিধ কারণ বিশ্লেষণ
খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা এবং বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যদের কাছ থেকে পিছিয়ে রাখছে । বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তির অভাব, এবং যোগাযোগ ও নেতৃত্বের ঘাটতি তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। 

যেসব কারণে খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে: 

 

ইংরেজি ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার ওপর অনেক বছর ধরে শিক্ষা গ্রহণ করলেও অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে বা লিখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পর্যাপ্ত চর্চার অভাবের কারণে ইংরেজি শেখা কেবল পরীক্ষার জন্য মুখস্থ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। 

এই ভাষাগত দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কর্মক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ করে তোলে। ফলে, আন্তর্জাতিক মানের কর্মসংস্থান বা উচ্চশিক্ষায় সুযোগ হারানোর সম্ভাবনাও থাকে। 

 

ব্যক্তিগত টিউটরের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা

খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত টিউটরের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা তাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানের সামর্থ্য এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। গ্রুপ স্টাডি বা দলবদ্ধভাবে নলেজ শেয়ারিং, পারস্পরিক সহায়তা এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনে এটি বাধা সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও নেতৃত্বের অভাব তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে চাকরি বা কর্মজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার ঘাটতি হিসেবে দেখা দেয়। 

 

প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব

খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতিও অন্যতম সমস্যা। স্কুল বা কলেজ পর্যায়ে কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহারিক শিক্ষা সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটার বা সফটওয়্যার ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে, অথচ প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে তারা আধুনিক কাজের পরিবেশে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়। অনেক শিক্ষার্থী প্রযুক্তি সম্পর্কে শুধু তত্ত্বগত জ্ঞান অর্জন করলেও বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে পারছে না।

 

কর্মমুখী দক্ষতার ঘাটতি

খাগড়াছড়ির মতো পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণত তত্ত্বগত শিক্ষার ওপর অধিক জোর দেওয়া হয়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা মুখস্থনির্ভর হয়ে পড়ে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় তত্ত্বগত শিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হলেও কর্মমুখী দক্ষতার ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে সফল হতে পারে না। শহরের শিক্ষার্থীদের মতো পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষা এবং বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ফলে চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে তারা মানসম্মত কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে না।


আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও উপস্থাপন দক্ষতার অভাব

খাগড়াছড়ির মতো পার্বত্য অঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসের অভাবে অডিয়েন্সের সামনে কোনো বিষয়কে উপস্থাপন করতে অস্বস্তিবোধ করে। পাবলিক স্পিকিং বা প্রেজেন্টেশন স্কিলের মতো দক্ষতার চর্চা না থাকার ফলে তারা নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। কর্মজীবনে, বিশেষত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কিংবা উচ্চ পদে চাকরির ক্ষেত্রে এটি তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের চিন্তা ও ধারণা উপস্থাপনে আত্মবিশ্বাস পায় না, যার ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীও বিকাশিত হতে ব্যর্থ হয়।

নেতৃত্বের গুণাবলীর অভাব

খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে উঠছে না। নেতৃত্বের অভাবের কারণ হিসেবে মূলত স্কুলে বা কলেজে সঠিক প্রশিক্ষণ বা উৎসাহের অভাব এবং গ্রুপ স্টাডির সুযোগ না পাওয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা বা বিতর্ক করার সুযোগ কম পায়, যার ফলে তারা নিজেদের ভাবনা প্রকাশ এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা অর্জনে পিছিয়ে থাকে। 

 

পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব

শহরের শিক্ষার্থীদের মতো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক শিক্ষার সুযোগ খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। ফলস্বরূপ, প্রযুক্তিগত দক্ষতায় তারা পিছিয়ে যাচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত জীবনে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব, সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ এবং বাস্তবমুখী কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। 

 

প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বাঁধা 

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাচাই হয়ে আসে, কিন্তু এই প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের দক্ষতার বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক চিন্তাভাবনায় আবদ্ধ হয়ে যায় এবং দলবদ্ধভাবে চিন্তা করা বা সহযোগিতামূলক কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারে না। অনেক উন্নত দেশে শিক্ষার্থীরা গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে সৃজনশীলভাবে নতুন কিছু উদ্ভাবন করছে, যেখানে খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থেকে যায়।  



খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি বিস্তৃত ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা। এ সমস্যা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে। খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থীদের জন্য যোগাযোগ দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। সে প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়িতে এডুলাইফ আইটি স্কুল নামে একটি স্কুল নার্সারী থেকে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে, যেখানে তারা উপরোক্ত সমস্যাসমূহ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্থানীয়দের ধারণা, এবার পাহাড়ের শিশুরাও ভালো কিছু অর্জন করতে পারবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow